বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ভাতা বাড়বে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা (2025)

অর্থনীতি

ফখরুল ইসলাম

ঢাকা

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের চলমান ৮টি কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ বাড়ছে। বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ভাতার পরিমাণ ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে।

সম্প্রতি সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে সাজানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। কমিটির সভাপতি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকটি হয়।

চা–শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তাঁদের সন্তানদের জন্য মাসিক উপবৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে নতুন করে। বেশির ভাগ ভাতা দেওয়ার কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারাও এত দিন বলে আসছিলেন, মানুষ ব্যাংকে আমানত হিসেবে অর্থ না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনলে যে বেশি সুদ পায়, তা বহন করতে হয় সরকারকে।

তবে এ খাতে মোট বরাদ্দ কমছে। চলতি অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা। আর আগামী অর্থবছরে তা কমিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকায় আনার পরিকল্পনা করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।

সূত্রগুলো জানায়, মোট বরাদ্দ কমলেও ভাতা বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে, অপ্রয়োজনীয় কিছু কর্মসূচি এবার বাদ দেওয়া হচ্ছে। অর্থ বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ বেশি দেখানোর জন্য তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রতি অর্থবছরেই এ খাতের বরাদ্দ ফুলিয়ে–ফাঁপিয়ে দেখিয়ে আসছিল।

অবসরভোগী সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ ইত্যাদিকে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয় দেখানো হয়। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারাও এত দিন বলে আসছিলেন, মানুষ ব্যাংকে আমানত হিসেবে অর্থ না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনলে যে বেশি সুদ পায়, তা বহন করতে হয় সরকারকে। ফলে এটাও সামাজিক নিরাপত্তা খাতের অংশ। সূত্রগুলো জানায়, পেনশনকে আগামী অর্থবছরেও এ খাতের বরাদ্দ হিসেবে দেখানো হবে, তবে বাদ দেওয়া হবে সঞ্চয়পত্রের সুদ পার্থক্যকে।

অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থসচিব বর্তমানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে গতকাল রোববার পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি ভাতা যাঁদের কাছে যায়, তাঁদের ৫০ শতাংশেরই তা পাওয়ার কথা না। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের কারণে তাঁরা এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। তাঁদের যদি বাদ দেওয়া যেত, তাহলে প্রকৃত উপকারভোগীদের ভাতা দ্বিগুণ করা যেত।

অবসরভোগী সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ ইত্যাদিকে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয় দেখানো হয়। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারাও এত দিন বলে আসছিলেন, মানুষ ব্যাংকে আমানত হিসেবে অর্থ না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনলে যে বেশি সুদ পায়, তা বহন করতে হয় সরকারকে।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও বীর মুক্তিযোদ্ধারা মাসিক ২০ হাজার টাকা করে সম্মানী পাবেন। আর ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত ৬০ হাজার জনকে দেওয়া হবে এককালীন ৫০ হাজার টাকা করে, যা বর্তমানেও দেওয়া হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থাকতে হবে। ৩০ এপ্রিলের পর এনআইডি ছাড়া ভাতা দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। ১৮ বছরের কম বয়সী উপকারভোগীদের ক্ষেত্রে এনআইডির বদলে থাকতে হবে জন্মনিবন্ধনের সনদ। অবশ্য অপ্রাপ্তবয়স্ক ভাতা গ্রহণকারীর অভিভাবকদের এনআইডি থাকতেই হবে।

বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী—কার ভাতা কত

চলতি অর্থবছরে ৬০ লাখ ১ হাজার জনকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে উপকারভোগী ৬১ লাখে উন্নীত করা হবে। এ জন্য বরাদ্দ ৪৪০ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৪ হাজার ৭৯১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। বয়স্কদের মাসিক ভাতার পরিমাণ বর্তমানের ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৬৫০ টাকা।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এর আনুষ্ঠানিক নাম বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা। এ ভাতা বর্তমানে পাচ্ছেন ২৭ লাখ ৭৫ হাজার জন। ভাতাভোগী ১ লাখ ২৫ হাজার বাড়িয়ে উন্নীত হচ্ছেন ২৯ লাখে। মাসিক এ ভাতার পরিমাণ ৫৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করা হচ্ছে। এ জন্য ৪৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে ১ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা থেকে করা হচ্ছে ২ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা।

বর্তমানে ৩২ লাখ ৩৪ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ভাতা দেওয়া হচ্ছে ৮৫০ টাকা করে। উপকারভোগী বেড়ে হচ্ছে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার জন। আর ভাতা বেড়ে হচ্ছে ৯০০ টাকা।

তবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি দেওয়া হয় প্রাথমিক স্তরে ৯০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৯৫০ টাকা, উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ১ হাজার ৫০ টাকা ও উচ্চতর স্তরে ১ হাজার ৩০০ টাকা। মোট উপকারভোগী ১ লাখ থেকে ৮১ হাজারে নামিয়ে আনা হচ্ছে। উচ্চস্তর ছাড়া বাকি তিন স্তরে উপকারভোগী কমিয়ে ১ লাখ থেকে করা হচ্ছে ৮১ হাজার। ভাতার হার আগেরটাই থাকছে।

বর্তমানে ৩২ লাখ ৩৪ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ভাতা দেওয়া হচ্ছে ৮৫০ টাকা করে। উপকারভোগী বেড়ে হচ্ছে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার জন। আর ভাতা বেড়ে হচ্ছে ৯০০ টাকা।

বাড়ছে বেদে ও অনগ্রসরদের ভাতাও

বেদে জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১০ হাজার ৮৯৮ জন বর্তমানে ভাতা পান। এ সংখ্যা বেড়ে ১১ হাজার ৯৮৮ হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে বর্তমানে ৫ হাজার ৬০০ জন বিশেষ ভাতা পান মাসিক ৫০০ টাকা হারে। আগামী অর্থবছরে ৬ হাজার ১৬০ জনকে বিশেষ ভাতা দেওয়া হবে ৬৫০ টাকা হারে।

বেদেদের সন্তানদের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চতর স্তরে যে মাসিক শিক্ষা উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মাসিক হারে, তা আগের মতোই থাকছে। তবে মোট উপবৃত্তিভোগী ৪ হাজার ৩৯৮ থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার ৮৩৮ জন করা হচ্ছে।

এদিকে হিজড়াদের ভাতাও ৬০০ থেকে বেড়ে ৬৫০ টাকা হচ্ছে। তাদের মধ্যে উপকারভোগী বাড়ছে না।

অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ ৬৮ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৬ কোটি টাকা করা হচ্ছে। মোট উপকারভোগী ৯০ হাজার ৮৩২ থেকে বাড়িয়ে প্রায় ১ লাখ করা হচ্ছে। বিশেষ ভাতা, শিক্ষা উপবৃত্তি ও মাসিক উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে তাঁদের। ৬০ হাজার জনকে বিশেষ ভাতা দেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা করে। আগামী অর্থবছরে ৬৬ হাজার জনকে দেওয়া হবে ৬৫০ টাকা করে।

শিক্ষা উপবৃত্তিভোগীদের সংখ্যা কিছুটা বাড়ানো হলেও প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চতর স্তরে ভাতা থাকছে বর্তমান হারেই ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।

প্রয়োজনের তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ভালো বরাদ্দ নেই। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যে সামান্য ভাতা দেওয়া হয়, তা দিয়ে এ উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে কিছুই হয় না। এ খাতকে নতুন করে সাজানো দরকার, যাতে প্রকৃত উপকারভোগীরা ভাতা পান।

নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, সানেম

চা–শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে চলতি অর্থবছরে ৩৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আগামী অর্থবছরে তা বাড়িয়ে তিন গুণের কাছাকাছি করা হচ্ছে এবং বরাদ্দ করা হচ্ছে ১০৮ কোটি টাকা।

চা–শ্রমিকদের উপকারভোগী বর্তমানে ৬০ হাজার জন। তাঁদের প্রত্যেককে এককালীন ৬ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছিল। এর বদলে উপকারভোগী ১ লাখ ৩৭ হাজার জনে উন্নীত করে আগামী অর্থবছরে মাসিক ৬৫০ টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁদের সন্তানদের ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা করে মাসিক উপবৃত্তি এবং প্রশিক্ষণ বাবদ নতুন করে সহায়তা দেওয়া হবে। এটাকে নতুন সিদ্ধান্ত হবে গণ্য করা হচ্ছে।

হিজড়াদের ভাতাও ৬০০ থেকে বেড়ে ৬৫০ টাকা হচ্ছে। তাদের মধ্যে উপকারভোগী বাড়ছে না।

মা ও শিশু সহায়তা নামে যে কর্মসূচি রয়েছে, তাতে বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ১ হাজার ৮১৯ কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। বর্তমানে ভাতা দেওয়া হচ্ছে মাসিক ৮০০ টাকা হারে ১৬ লাখ ৫৫ হাজার জনকে। ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৮৫০ টাকা। আর ভাতাভোগী বাড়িয়ে করা হচ্ছে ১৭ লাখ ৭১ হাজার।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে কেন্দ্র করে সরকারের উদ্যোগ নিয়ে জানতে চাইলে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ভালো বরাদ্দ নেই। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যে সামান্য ভাতা দেওয়া হয়, তা দিয়ে এ উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে কিছুই হয় না। এ খাতকে নতুন করে সাজানো দরকার, যাতে প্রকৃত উপকারভোগীরা ভাতা পান।

অর্থনীতি থেকে আরও পড়ুন

  • বিশেষ সংবাদ
  • অন্তর্বর্তীকালীন সরকার
  • বয়স্ক ভাতা
বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ভাতা বাড়বে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা (2025)
Top Articles
Latest Posts
Recommended Articles
Article information

Author: Msgr. Refugio Daniel

Last Updated:

Views: 6537

Rating: 4.3 / 5 (54 voted)

Reviews: 93% of readers found this page helpful

Author information

Name: Msgr. Refugio Daniel

Birthday: 1999-09-15

Address: 8416 Beatty Center, Derekfort, VA 72092-0500

Phone: +6838967160603

Job: Mining Executive

Hobby: Woodworking, Knitting, Fishing, Coffee roasting, Kayaking, Horseback riding, Kite flying

Introduction: My name is Msgr. Refugio Daniel, I am a fine, precious, encouraging, calm, glamorous, vivacious, friendly person who loves writing and wants to share my knowledge and understanding with you.